বৃহস্পতিবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১২

কল্প কাহিনী-ভিন গ্রহের সবুজ ভূমি

 এস, কে, দোয়েল



সম্পাদক আলোর ভূবন
হঠাৎ পথ চলতে একটি ঘাসের উপর একটি জিনিষ ঝলমল করতে দেখা গেল, বিস্ময়কর সে জিনিস। আশেপাশে চেয়ে দেখল ন্যালসন জনমানবহীন। ক্ষুদ্র এই জিনিষটা অদ্ভুত নড়াচড়া করছে। তাতে ভীতি সঞ্চার হলেও সাহস করে ধরে ফেলল জিনিসটাকে ন্যালসন। সহসাই Thank you শব্দটি ভেসে এল অদৃশ্য থেকে। জিনিসটি অবিকল একটা ডায়মন্ড। কয়েকমিনিট সে ডায়মন্ডটা হাতে নিয়ে ভাল করে দেখতে লাগল ন্যালসন। তবে এটা সাধারণ পাথর নয়; বিস্ময়কর এক ম্যাজিক পাথর। হ্যাঁলো যুবক আমাকে যত্ন করে পকেটে রাখ নইলে ফসকে যাব। পরে হারাবে আমায়? অদ্ভূত এ পাথরটার কাছ থেকে এরকম একটি কথা বের হয়ে আসবে। তাতে ভাবনায় পড়ে গেল ন্যালসন। আবার পাথরটি বলে উঠল হ্যাঁলো যুবক জানি তুমি এখন ক্ষুধার্ত, সামনের এগোও, পেয়ে যেতে পার একটি আপেল। তা দিয়ে তুমি ক্ষুধা নিবারণ করতে পারবে। 

বড় আশ্চর্যের কথা, পেটে ক্ষুধা লেগেছে তা কি করে জানল জিনিষটি? তাতে হতবাক হল ন্যালসন। আসলেই তো সকালে পানাহার করিনি। মর্নিং ওয়ার্ক করতে এসে এরকম একটা অদ্ভুত জিনিসের সাথে এমনটি ঘটবে, তা কল্পনাতীত না হয়ে পারে না। আবার হাটতে লাগল ন্যালসন পাথরটার কথা মত।
হঠাৎ বাম দিকে চোখ পড়তেই দেখা গেল সত্যিকারভাবেই একটি আপেল। লাল টস টসে। খুব সুন্দর এবং বেশ বড়। আপেলটি পেয়ে সে আনন্দিত হল। ক্ষুধাকে দূর করার জন্য সে তা খেতে আরম্ভ করল। কারণ তার প্রচন্ড ক্ষিধে পেয়েছে। আপেলটি খাওয়া শেষ হলে Thank you very much শব্দটি আবার শুনতে পেল সে। কেন এই Thank you শব্দটি পাথরটি বলে যাচ্ছে তার কারণ বুঝতে পারছেনা ন্যালসন।
কি খেল ন্যালসন তা তার মনে নেই। খানিকটা পানির পিপাসা লাগলো তাঁর। অদৃশ্য থেকে কে যেন এক গ্লাস শরবত এগিয়ে দিল। কিন্তু তার হাত ছাড়া তাকে দেখা গেল না। শরবত পান করল ন্যালসন আনন্দ চিত্তে। ভিন্ন রকম স্বাদ। শরীরটা ক্রমে ঠান্ডা হয়ে এল শরবত পানের ফলে। দু’ চোখে ঘুমের আর্বিভাব। ঘুমন্ত শিশুর মত ঘুমিয়ে পড়ল ন্যালসন। সহসাই তার পকেটে রাখা জিনিষটি একটি নারী রূপ ধারণ করে তাকে নিয়ে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল। আড়াল থেকে দু’জন মানব মানবী বলাবলি করছিল যে, এ পৃথিবীর লোকটিকে নিয়ে তাদের গ্রহের মানুষদের সাথে মিলিয়ে দেখবে, এদের মধ্যে ন্যাচারের তফাৎটা কতটুকু। এটা নির্ধারণের জন্য ন্যালসনকে পৃথিবী থেকে অপহরণ করে তাদের নিজ গ্রহে গন্তব্য স্থলে প্রত্যাবর্তন করল।
ঘন্টা চারের পর ঘুম ভাঙ্গল ন্যালসনের। যে বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল সে বিছানাটি ছিল ভিন্ন রকম চমকপ্রদ। পৃথিবীর কথা সে ভূলে গেছে একেবারে। এই ভিন গ্রহটাই তার আপন পৃথিবী বলে মনে হল। তবু মনে কিছুটা সংশয় লাগছে তাঁর। স্মৃতিশক্তি তাঁর একেবারে লোভ পায়নি এমনটি মনে হচ্ছে। বাহির জগৎ বেড়ানোর উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হল ন্যালসন। হাটতে লাগল সেই আজব গ্রহের সবুজ গ্রামের পথ দিয়ে। অপরূপ ছায়া ঘেরায় এ গ্রাম। বিচিত্র রূপ আর সৌন্দর্যের আকর্ষিত মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। পথ চলতে চলতেই সামনে পরে গেল কিছু অদ্ভুত গোচের অচেনা মানুষ। তারা এমন দৃষ্টিতে ন্যালসনকে দেখে থাকল যে, কোন কালেও যেন এরকম দৃষ্টি কারো প্রতি পড়েনি। কি যেন বলাবলি করছিল তারা পরস্পরের মধ্যে। কিন্তু ন্যালসন তা বুঝতে পারল না। বুঝবেই বা কি করে। তারা তো আর ন্যালসনের বুঝার মত বাংলা ইংরেজী বলে না। যে বুঝা যাবে?
ওই অদ্ভুত মানুষ গুলো দেখতে খুব চমৎকার। গোলগাল মুখাকৃতিতে আছে মায়াবী আকর্ষণ। লাবণ্য বর্নের সোনালী মনোহর রূপ মাধুর্য্য। দু’চোখের দৃষ্টিতে আছে মন কাড়া চাহুনি। প্রায় জনের দেহের স্বাস্থ্য বেশ উন্নত। পোশাক আষাকে তেমন উন্নত না হলেও দেখতে ভালই লাগছে। ঠিক জাপানী লোকদের মতই উঁচু লম্বা। তাদের পোশাকের সাথে ন্যালসনের পোশাকের মিল নেই ভেবে বিচিত্র বলেই মনে করল নিজেকে।
আবার হাটতে লাগল সে সামনের পথে। সবুজ বিস্তৃর্ণ একটি মাঠ সামনে পড়ে গেল। অপরূপ সাজে মাঠটি সবুজ গাছ পালা দ্বারা বেষ্টিত। সেখানে বিচরণ করছে সুন্দর প্রজাতির বিচিত্র প্রাণী। পাখ পাখালি। চারপাশ সবুজের সমারোহ কিন্তু কোথাও জনমানবের কোন বস্তির চিহ্ন মাত্র নেই। দূর থেকে মনে হয় এটা সবুজ নগরী। ন্যালসনের খুব আনন্দ লাগছে এ সুন্দর প্রকৃতিময় বিস্তৃর্ণ মাঠটির প্রতি চেয়ে থেকে। সে কিছুটা বুঝতে পারছে এটা পৃথিবী থেকে আলাদা একটি জগৎ। ভিন্ন একটি গ্রহ। বিধাতার কল্যাণ আর সৃষ্টির শেষ নেই । সবুজ ঘাসের উপর বসে পড়ে ন্যালসন। প্রচন্ড ভাল লাগছে, অনুভবে আসছে প্রশান্তি। কিন্তু দেহটা ভারি ক্লান্ত হয়ে গেছে, বহু সময় হেটে। কতক্ষন হেটে বেড়িয়েছে সে তার সময় জানা না থাকলেও ক্লান্তি অনুভব করে মনে করতে পারছে বহু হেটেছে সে। নির্মল বাতাসে তার দেহ প্রশান্তিতে ফিরে এল। নরম ঘাসের বুকে তার পড়ন্ত শরীরটা এলিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতির মাঝে এখন বসন্তকাল। ভরা যৌবনে গাছপালা, তরুলতা উজ্জবিত হয়ে বাতাসে দোল খাচ্ছে। তা দেখে মনে হচ্ছে এ গ্রহটা সবুজ বর্ণীল স্বর্গীয় ভুবন। ভাবল ন্যালসন। এ গ্রহে থেকে যাবে সে। এখানে জন সমাগম কম। পৃথিবীতে তো ভরে গেছে মানুষে মানুষে। তাছাড়া বাংলাদেশের মত ছোট্ট রাষ্ট্রে ১৫ কোটি জনতা মৌমাছির মত কিলবিল আর ভিনভিন করছে। শান্তির বসবাস আজ অশান্তির বসবাসে ভরে গেছে পৃথিবীটা।
পৃথিবীতে আজ তেমন প্রাণীদের মধ্যে দলাদলি নেই। আছে মানুষ মানুষের মধ্যে তীব্র সংঘাত। এক জাতি থেকে অন্য জাতিতে চলছে তুমুল যুদ্ধ। ফলে পৃথিবীটা হয়ে উঠেছে অতিষ্ট আর নিরাপত্তাহীন। ওখানে আর শান্তিতে বসবাসের সুযোগ নেই। আছে যুদ্ধের ভয়, মরনের জয়। আর জীবনের নিরাপত্তার বদলে আছে পরমাণুর শক্তির আঘাতে ধ্বংস হবার ভয়। মানুষ আর মানুষের মত নেই। তারা হয়ে উঠেছে হিংস্র জানোয়ারের চেয়েও ভয়ংকর। তার চেয়ে এই ভিন গ্রহের সবুজ ভূমিতে বাস করা শান্তিপ্রদ হবে। এখানে একদিন সংসার হবে, পরিবার গড়ে উঠবে। শান্তিতে থাকা যাবে কিছু দিন। না হলেও কয়েক’শ বছর।
যেখানে পৃথিবীর বাতাস আর বায়ুমন্ডল বিষাক্ত হয়ে উষ্ণতা বিরাজ করছে। অক্সিজেনের ধ্বংসের জন্য গাছ পালা কেটে কার্বন ডাই অক্সাসাইডের মত বিষাক্ত কিছু গ্যাস গ্রহণ করতে হচ্ছে। মানুষ মানুষকে হত্যা করার জন্য যেভাবে গুদাম করে রাখা হচ্ছে সমরাস্ত্র। ভয়ার্ত পরমাণূ গঠিত শক্তি শালী বোমা, যা দিয়ে কয়েক ঘন্টা বা মিনিটের মধ্যে পৃথিবী নামক গ্রহটাকে ধ্বংস করা কোন মামুলি ব্যাপার নয়। সেখানে শান্তি কোথায়? শান্তির বাপ-মা অকালেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। তাই পৃথিবীতে থাকা আর নিরাপদ নয়। এ ভিন গ্রহের সবুজ ভুমিতে বাস করার মনোভাব নিচ্ছে ন্যালসন। আর মনে মনে ভাবছে অনেক কিছু, যে কল্পনা অসীম।
কি ভাবছো ন্যালসন, হঠাৎ পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল? তাতে সে চমকে উঠে; বুকটা তার ধুরু ধুরু শুরু করে। চোখ মেলে দেখে এক যৌবনা মেয়ে তার মাথায় আলতোভাবে মুদৃভরে সোহাগ করছে। বেশ ভালও লাগছে তার। একধ্যানে চেয়ে থাকল ন্যালসন মেয়েটির লাবণ্য মুখটির পানে। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। তার মায়াবি হরিনী ডাগর দু’টি চোখে আছে পিপাসা ভরা যাদু। যতই দেখছে মেয়েটিকে ততই ভাল লাগছে ন্যালসনের। সম্বিত ফিরে এসে সে প্রশ্ন করল, আচ্ছা তোমরা আমাকে পৃথিবী থেকে তুলে আনলে কেন। তাতে লাভটাই বা কি তোমাদের?
লাভ পার্থক্য নির্ধারণ। তোমাদের পৃথিবীর মানুষদের ন্যাচারের সাথে আমাদের সাথে কতটা তফাৎ। তবে তফাৎটা তেমন কিছু দেখলাম না। তোমরাও আদম সন্তান, আর আমরাও আদম সন্তান। তবে আমরা পরিবেশ দ্বারা বিভিন্নভাবে লালন পালন হচ্ছি। আমাদের ভাষা, কালচার এবং গ্রহটা সম্পূর্ণ আলাদা। স্রষ্টার এক একটা গ্রহ যেন এক একরকম। তবে আমাদের গ্রহের চেয়ে পৃথিবী গ্রহের মানুষদের জ্ঞান বুদ্ধি অনেক গুনে বেশী। তারা শুধু পৃথিবীটাকে নয়, সমগ্র বিশ্বায়নের গ্রহ, উপগ্রহের সন্ধানে গবেষণা নিয়ে ব্যতি ব্যস্ত। একদিন হয়তো আমাদের গ্রহেও তাদের আর্বিভাব ঘটবে। আবিস্কার করবে উন্নত যন্ত্রযান। তাদের পদাচরণে আমাদের এই সবুজ গ্রহের মাটির বুকে বস্তি গড়ে উঠতে পারে। তবে সেটা কতদিনে তা বলা যাচ্ছে না। কথাগুলো শুনে ন্যালসন একটি রম্যকরে বলে উঠল, কেন আমি তো পৃথিবী গ্রহের মানুষ। তোমাকে বিয়ে করে আমার ঔরশজাত সন্তানরা তোমাদের গ্রহে সংসার ও রাজত্ব করবে তোমাদের গ্রহে।
আচ্ছা বিয়েটা কি? বলল মেয়েটি। বড় আশ্চর্য মেয়ে তো বিয়ে জিনিসটা জানে না। ভাবল ন্যালসন। পরে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলে দু’জনে হেসে উঠল। চলো ন্যালসন গৃহে ফিরে বলল মেয়েটি, ঠিক আছে চল দু’জনেই হাত ধরা ধরি করে ফিরল গৃহে।
মেয়েটির ঘরটা বেশ পরিপাটি। খুব সুন্দর ও সৌন্দর্যের কারুকার্যে গঠিত। অন্ধকার নেমেছে এ গ্রহে। কিন্তু চারপাশে তখনো জোছনায় আলোকিত। রাতের পানাহার করল ন্যালসন কিছু ফলফলান্তি দিয়ে। বিচিত্র স্বাদ। পৃথিবীতে পাওয়া যায় এমন একটি ফল পেল সে। “চেরি” নামে যে ফলটি মধুর মত মিষ্টান্ন সে ফলটি খেয়ে তার মন আনন্দে ভরে গেল। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় যে, ভাতের কোন গন্ধ নেই। তবে কিসের তৈরী আটা রয়েছে, তা দিয়ে বানানো হয় মিষ্টান্ন সব পিঠা। আশে পাশে বসে আছে এ পরিবারের সদস্য মহল বেশ ধবল আর শ্বেতাঙ্গ জোছনার ন্যায় তাদের রূপ মাধুর্য্য। এ গ্রহে আকাশে বেশ কয়েকটি আলোর জ্যোতি দেখা গেল। তারা পৃথিবীর চাঁদের মতই আলো দেয়। রাতে বেলায় দেখায় অপরূপ জোছনা ভরা চারপাশ। খাওয়ার ফাঁকে গল্প চলছে বেশ রসালাপে। হাসাহাসিও কম হচ্ছে না। তবে এ গ্রহে মেয়েদের তুলনায় পুরুষের সংখ্যা নেহাত-ই কম। এদের জীবনে প্রথম বসন্ত আসে বিশ-তেইশ বছর বয়সে। এরা দীর্ঘজীবি, বহুদিন বাঁচে। শতাব্দির নিচে কম লোকই মারা যায়। এখানে তেমন পুরুষের সংখ্যা বেশী নেই বলে মেয়েদের পক্ষে প্রজনন ক্ষমতার অভাবে সন্তান উৎপাদন কম। তাই জনসংখ্যা খুবই কম। তবে এ গ্রহে অন্যান্য প্রাণীদের বসবাস বেশী। যে মেয়েটি ন্যালসনকে পৃথিবী থেকে তুলে এনেছে, সে এখন পূর্ণ যুবতী। তাঁর নাম চন্দ্রীলা। পৃথিবীর পুরুষের কেমন কামভাব তা সে জানে না। ফলে অর্ধ রাত্রিতে চন্দ্রীলা ন্যালসন কে মিলনের আহবান করল। তাতে ন্যালসন প্রথমে রাজি না হলেও শেষে বাধ্য হল। প্রথম বাসর তার আজ ভিন গ্রহে। প্রায় ঘন্টা খানেক সময় চললতাদের দৈহিক মিলন । পূর্ণতৃপ্তি সহকারে উপভোগ করল চন্দ্রীলা যৌন স্বাদ।রাতের শেষ প্রহর। ন্যালসন ফরজ গোসল সেরে ঘুমিয়ে পড়ল ফজরের নামায পড়ে। চন্দ্রিলার দহ-মনে প্রশান্তি আর প্রশান্তি। পৃথিবীর মানুষেরা কত্তো সুন্দর ও সুশৃঙ্খল। চন্দ্রিলা ন্যালসনের পা ছুঁয়ে সালাম করে পরম সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকুরিয়া আদায় করে। অত:পর সে ন্যালসনের বুকের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে##
[লেখাটি ২০০৪ সালের দিকে লেখা]
Print this post

1 টি মন্তব্য: