সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১২

নাইন-ইলেভেন পরিবর্তন এনেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান গবেষণায়                                                         
রোকনুজ্জামান রাকিব

ফরেনসিক মেডিসিন। হত্যা মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। তবে ২০০১ সালে টুইন টাওয়ারে হামলার ঘটনার পর নিহতদের চিহ্নিত করতে চিকিত্সা বিজ্ঞানের এই শাখার বেশ ব্যবহার হয়েছে। কেননা হামলাস্থল ‘গ্রাউন্ড জিরো’ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল অনেক হাড়গোড়। সেগুলো থেকে মানুষের পরিচয় খুঁজতে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের। দিনরাত পরিশ্রম করে তারা সে কাজ করেছেন। এর ফলে যেটা হয়েছে সেটা হলো, মাটি লেগে থাকা চূর্ণবিচূর্ণ হাড় থেকে কীভাবে মানুষের পরিচয় জানা সম্ভব সে বিষয়টি আরও ভালোভাবে রপ্ত করতে পেরেছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। এই অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে কাজে লেগেছে অন্যান্য দেশেও, যেখানে গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে।
যেমন আফ্রিকা, এশিয়া, বসনিয়া, ইরাক ইত্যাদি। এছাড়া অনেক দেশ এখন এসব ক্ষেত্রে মার্কিন বিজ্ঞানীদের সহায়তা নিচ্ছে। শুধু ফরেনসিক মেডিসিনেই নয়, নাইন-ইলেভেন পরিবর্তন এনেছে আরও অনেক ক্ষেত্রেই।যেমন বায়োডিফেন্স, সংক্রামক ব্যাধি, জনস্বাস্থ্য, সাইবার নিরাপত্তা, ভূতত্ত্ব, জ্বালানি ও পরমাণু অস্ত্র ইত্যাদি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চালু হয়েছে ‘টেরোরিজম স্টাডিজ’, ‘রিস্ক অ্যানালিসিস’ ইত্যাদি বিষয়ে পড়াশোনাও।

পাল্টে দিয়েছে বিশ্বের অনেক কিছু
আমেরিকার প্রখ্যাত বিজ্ঞান গবেষণা সংস্থাগুলো নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েছে। যেমন—প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বিস্ফোরক দ্রব্য কীভাবে আরও ভালোভাবে চিহ্নিত করা যায় সে বিষয়ে গবেষণা করতে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়া ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ, জ্বালানি মন্ত্রণালয়—এসব সংস্থাও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণায় বাড়তি অর্থ দিচ্ছে।
এদিকে নাইন-ইলেভেনের ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে ‘ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ নামের পুরো একটি মন্ত্রণালয়। মোট ২২টি কেন্দ্রীয় সংস্থা একসঙ্গে মিলিয়ে ২০০২ সালে এটি গঠন করা হয়, যার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা দেখা। এরপর থেকে প্রতি বছর বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণায় তাদের অর্থ বরাদ্দ বাড়তে থাকে। ২০০৬ সালে সেটা দাঁড়ায় ১৩০ কোটি ডলারে। যদিও আর্থিক মন্দার কারণে এ বছর সেটা কমে হয়েছে ৭০ কোটি ডলার।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে
সব পরিবর্তনই যে ইতিবাচক হয়েছে তা নয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্যই এর ব্যতিক্রম হয়েছে। যেমন : বায়োমেডিকেল। এক্ষেত্রে গবেষণায় আনা হয়েছে নতুন কিছু কঠোর নীতি। এছাড়া আগের আইনগুলোও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে কড়াভাবে। ফলে নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে বিজ্ঞানীদের গবেষণা। কেননা আগের মতো আর সহজভাবে বায়োলজিক্যাল উপাদান আমদানি বা রফতানি করা যাচ্ছে না। যেমন প্যাথোজেন জীবাণু। বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের গবেষণায় এটা প্রয়োজন। কিন্তু সন্ত্রাসীরা এই জীবাণু কাজে লাগিয়ে মারণাস্ত্র তৈরি করতে পারে এই ভয়ে তাদের হাতে যেন প্যাথোজেন যেতে না পারে সেজন্য এর আমদানি-রফতানি করা হয়েছে সীমাবদ্ধ। এসব কারণে জনস্বাস্থ্য ও কৃষিখাতের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় ধীরগতি দেখা যাচ্ছে।

ক্ষতিও কম হয়নি
সংক্রামক ব্যাধি গবেষক জেরি জাক্স। ক্যানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটির এই বিশেষজ্ঞ বলছেন, কড়া নীতির কারণে বায়োমেডিকেল ক্ষেত্রের নানা গবেষণা বাতিল হয়ে গেছে।
আরেকটা বড় সমস্যা হয়েছে, সেটা ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে। ফলে বিদেশ থেকে মেধাবীরা যুক্তরাষ্ট্রে সহজে যেতে পারছেন না। ফলে দেশটি হারাচ্ছে ভালো গবেষক, আর গবেষক হারাচ্ছেন গবেষণার ভালো সুবিধা। এতে আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরো মানবজাতি।
‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’-এর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আলবার্ট টিখ বলেন, কঠিন ভিসা প্রদান নীতির কারণে ২০০৩ সালে বিদেশি গবেষকদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া উদ্বেগজনক হারে কমে গিয়েছিল। পরে বিজ্ঞানীরা সরকারের কাছে এ ব্যাপারে আপত্তি জানালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়।
টিখ বলেন, নাইন-ইলেভেনের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞান গবেষণায় অনেকভাবেই পরিবর্তন এনেছে। তিনি বলেন, ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ’ আগে ছিল একটি উন্মুক্ত ক্যাম্পাস। এখন তার চারপাশে বসানো হয়েছে ইস্পাতের বেষ্টনী যেটাকে টিখ মনে করছেন নাইন-ইলেভেন হামলার প্রত্যক্ষ পরিবর্তন হিসেবে।
                                                                                                                             rakibtetulia@yahoo.com
Print this post

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন