রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১২

আসুন সুন্দর চিন্তা করি প্রতিটি সময়

এস, কে, দোয়েল
[সম্পাদক]
 
২০১২ সাল একটি সম্পূর্ণ নতুন একটা বছর। যে দিনটি আমাদের জীবন থেকে অতীত হয়ে যায় সেটাকে আমরা একটা পুরাতন দিন বলি। ১ জানুয়ারি সব্যচাষী কবি সৈয়দ সামসুল হক দৈনিক সমকালের প্রথম পৃষ্ঠায় “নতুন দিন : ভোরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি” লেখাটিতে এই কথাটি আমার অত্যন্ত হৃদয় কেড়েছে। যা কোটেশন না করে পারছিনা।“আজকে একটি নতুন দিন এলো। বলছি নতুন দিন। কাল একটি নতুন দিন ছিল। বলবো তাকে,পুরনো দিন? না। কাল দিনটাকে বলছি গতকাল। আর আজকের দিনটি আজকের। কালকের তুলনায় আজকের দিনটিকে যদি আগামীকাল,তাহলে তার অর্থ সামান্য থেকে অসামান্যে পৌছতো। ও আগামী দিনটি শব্দটাই বিপুল বিশাল এক বিস্তার চায়”।

 

ঠিক তাই। আগামী দিনটি একটা চমক,আশার বাঞ্জনা,স্বপ্ন আকাঁ ভবিষ্যত। জীবনের আশা-আকাংখার মাঝখানে সকল পরিকল্পনা জড়িয়ে আছে আগামী বা আগামীকালটি। একজন ছাত্রের আজকের পড়াটা না হওয়ায় সে ভাবছে আগামীকাল অবশ্যই পড়াটা সে নিজের আয়ত্বে মুখস্থ করে নিতে পারবে। আগামীকাল থেকেই তার আবার নতুন করে পরিকল্পনার ছক তৈরি করে নিবে। কখন সে কি করবে। তারও একটি রুটিন তৈরি হবে। সেই রুটিন অনুসারেই জীবনের পথে সাফল্যেকে ধরতে নতুন নতুন প্লাটফর্ম তৈরি করার পথ তৈয়ার হবে। স্বপ্ন এগিয়ে যাবে কাজের গতি ধারায়। স্বপ্নের ভিতর রচিত হবে বাস্তব একটা সুন্দর ভবিষ্যত। এই হলো নতুন দিনের নতুন জীবন চলার নথিবদ্ধিতার দিন পুঞ্জিকা। সত্যিই বলতে কি আমারও একটি দিন থেকে পরিকল্পনা শুরু হয়। সেটা শুরু শুক্রবার রাতে সমস্ত পরিকল্পনা নথিবদ্ধ করে আগামীকাল শনিবারের ভোর হতেই শুরু করা হবে নতুন করে সব কাজ।শুরুও করি সেভাবেও। ঠিক এভাবেই আমাদের নতুন এই বছরটির শুরু দিয়ে যাত্রা হোক আমরা কি করতে পারি আমাদের জন্য,কাজের জন্য।

২০১২ সাল ৩৬৫টি দিনের ৫২ সপ্তাহের একটি বছর। সাদরে-আনন্দ উল্লাসে গ্রহণ করেছি এই বছরটি। বিশ্বে জাতিদের মাঝে নতুন এই বছরটি গ্রহণ করতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি রাত্রি বারটা পর্যন্ত ২০১১ কে বিদায় দিয়ে ২০১২ কে গ্রহণ করতে কতটা উদগ্রীব ছিল সবাই,সেটা লক্ষ্য করেছি বিভিন্ন ক্লাব, টেলিভিশন চ্যানেল,ওয়েবসাইট,ব্লগগুলোতে। বিশেষ করে থার্টিফাস্ট নাইট নামটি মধ্যরাতে আনন্দের ঝংকার তুলে। তারুণ্যের উদ্যমতা বিকাশ ঘটায়।“আহা আজ আকাশে বাতাশে,কি আনন্দ”সূরের মুর্ছনায় নেচে উঠে যেন প্রকৃতিও। এ আনন্দ-উল্লাসের মোহকুঞ্জে পড়ে হয়তো আমরা ভুলে যাই হারানো সব কিছুকে। আমাদের চিন্তায় আসে না যে,জীবন থেকে আমরা হারিয়ে ফেললাম ৩৬৫ দিনের একটি বছর। এভাবেই কেটে গেছে চোখের সামন দিয়ে অগনিত দিন-মাস। আমরা শুধু এই হিসাবটি রাখি জীবনের কতটি বসন্ত পেরিয়ে এসেছি। এরই মাঝে পুরাতনরা বিদায় নিয়েছে,নতুনের আগমন ঘটেছে।ঘরের দেওয়ালের পুরাতন ক্যালেন্ডার নামিয়ে নতুন বছরের ক্যালেন্ডার লাগিয়েছি। প্রতিদিনের পত্রিকাগুলোতে বছরের শেষ দিনটিতে গুছিয়ে নতুন বছরের নতুন ক্যালেন্ডারের জন্য চাতক পাখির মতো দৃঢ় অপেক্ষায় থাকি। ভাল কিছু খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন করে থাকি। ৩১ ডিসেম্বর আমিও বিশ্বের আকাংখিত মানুষদের মতো অপেক্ষা করছিলাম মধ্যরাত পর্যন্ত ২০১২ সালটির জন্য। এ জন্য আমাদের উদ্দেগে একটি বনভোজনের আয়োজনও ছিল। নতুন একটি বছরকে বরণ করতে মানুষ কতটা উতলা হতে পারে সেটাই দেখার জন্য চোখ দুটিকে ক্যামেরা বানিয়ে মনের খাতায় লিখনির ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। ভাবছিলাম ২০১১ সালটাকে আমি ও আমরা এবং আমাদের দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা কি করতে পেরেছি। কতটা সফল হয়েছি। দেশের মা হচ্ছে রাষ্ট্রপ্রধান। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা। জনগণের সুখ-দুঃখের অংশীদার দেশের সরকার। জনগণ কতটা সুবিধা পেয়েছে,কতটা ভোগান্তিত হয়েছে। দ্রব্যমূল্য কি স্বাভাবিক ছিল,জানমালের নিরাপত্তা কি ঠিক ঠিক ছিল? আমার সাধারণ মনে উত্তর উথলিত হয়ে আসে,না সরকার ২০১১ তে মোটেই সফল হতে পারে নি। নানান সমস্যা সরকার মোটেই সমাধান করতে পারেন নি। শেয়ার বাজার ধস,কৃষকের উৎপাদিত শস্যের মূল্যের চরম হ্রাস,সড়ক দূর্ঘটনার নির্মম ট্রাজেডি,হত্যা-গুম,অপহরন,সরকারের মন্ত্রীসভায় রদবদল, চারমিনিটে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বিভক্তিকরণ, সরকারের ব্যাংক ঋণ,পদ্মা সেতু নিয়ে দূর্নীতি,টিপাইমুখ বাধ সরকারের নীরবতা অপর দিকে বিরোধী দলের হরতাল,যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কথা বলা বিষয়াদি নিয়ে যেমন ২০১১ সালটি এই দেশটির জনগণেরও শুধু ভোগান্তির একটা বছর।

২০১১ সালের বিদায়ী সূর্যের মতো হারিয়ে ফেলেছি এমন কতক গুনীজন,শ্রদ্ধাজন তথা দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের।আমরা হারালাম-জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী (১৩ ডিসেম্বর), বিশিষ্ট সাহিত্যিক কথা শিল্পী রশীদ করিম (২৬ নভেম্বর),বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ,ভাষা সংগ্রামী,মুক্তিযোদ্ধা এবং বিএনপি মহাসচিব খন্দকার দেলোয়ার হোসেন (১৬ মার্চ), মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল কাজী নুরুজ্জামান (বীর উত্তম ) ( ৬ মে), মুক্তিযোদ্ধা ও খ্যাতিমান আলোকচিত্রী রশিদ তালুকদার (২৫ অক্টোবর), স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক অজিত রায় ( ৪ সেপ্টেম্বর), প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এবং দেশের শিল্প আন্দোলনের অন্যতম রুপকার আমিনুল ইসলাম ( ৮ জুলাই),‘ পপ গুরু’মুক্তিযোদ্ধা আজম খান ( ৫ জুন), বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ ও টেলিভিশন সাংবাদিকতার পথিকৃত এবং এটিএন নিউজের সিইএ মিশুক মুনির (১৩ আগস্ট),মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রাজ্জাক (২৩ ডিসেম্বর) এবং সর্বশেষ হারালাম ৩০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা,সেক্টর কমান্ডার ও বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক হামিদুল্লাহ খানকে।এই হারানোর মাঝেও আমরা খুজে নিচ্ছি নতুন একটি বছর।কালের গর্ভে ২০১১ ডুবে গেলেও নতুন একটি বছরকে পেয়ে নব দিগন্তের উদিত সুর্যের বিচ্ছুরিত আলোর মত কামনা করছি এই শতাব্দির ২০১২ সালটি বিশ্বের প্রত্যেক মানব জাতির জীবনের সুখের পরশ ছুয়ে যাক।
Print this post

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন