মঙ্গলবার, ২২ মে, ২০১২

কাব্যগল্প: কেমন আছেন?

                                                                                                        S.K.DOYEL


মেঘ ঢেকেছে আকাশ,বৃষ্টির ছটায় ভিঁজছে সমতল ভূমি

জ্যৈষ্ঠের খরা রোদের শুস্ক প্রকৃতিকে খানিকটা করেছে শান্তিপ্রিয়
ছাতাহীন বৃষ্টির জলে ভিঁজছে দোয়েল পাখি নামে একুশ শতকের তরুণ কবি
ভিজতে ভালোই লাগছে,অনুভূতির ভিতর সিক্ত নির্যাস
পতিত জমিতে হঠাৎ সবুজ ফসল গজালে যে আনন্দটুকু হয়,
দোযে়ল পাখি বর্ষার জল-কাদা মাটিতে আনন্দের ধেই ধেই,
কচু পাতার উপর মেঘ বৃষ্টির টপাটপ আলিঙ্গন,
দূর থেকে অস্পষ্ট ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখা যাচ্ছে,
ভিঁজছে কোন এক কুঁডি় বয়সের লাবণ্য যুবতী
বৃষ্টির ঢল নামলেই কবির মানসে সৃষ্টি হয় খোলা জানালার মত মুক্ত সব কবিতা
উড়ন্ত ডানার মত বিহঙ্গ হয়ে কবিতাকাশে উড়ে বেড়ায় কবি-কবিতা,
মনের কাগজে স্বপ্ন ডানার আঁচরে ঝরণার মত প্রবাহিত হয় কবিতার নহর,
পাহাড়ী ঝরণার মত গড়িয়ে পড়ে কাব্য ভূ-অভ্যন্তরে
ফুলের নির্যাসের মত এক একটি কবিতা
একুশ সভ্যতার এই ঝলসানো প্রযুক্তির উষ্ণ প্রকৃতির দাবদাহে
প্রতিনিয়তই অস্ত্র-সম্ভারের ঝনাঝনানিতে চিন্তিত মানুষ,
ঝরা বৃষ্টি ফোঁটার মত ফুটতে থাকে তাজা বোমাগুলো,
বিধ্বংস জাতি-সভ্যতায় চোখ ধাঁধানো ভীবৎস সব ভয়ার্ত চিত্র!



এই যে দোয়েল পাখি বৃষ্টির জলে দেখছি মহা আনন্দেই মাতছেন
পিছন থেকে উচ্ছাস স্বরে লজ্জারাঙা ঠোঁটে ভেঁজা কাপড়ে বলে যুবতী
কবি (দোয়ৈল পাখি) অবাক হয়,এমন সুন্দর বৃষ্টি ভেঁজা উষ্ণ যৌবনা মুখ,
কখনো চোখে পড়েনি যেন আধো,
আপনাকে ঠিক চিনতে পারলাম না,বলে কবি
আমি আপনাকে চিনি,তো কেমন আছেন?
বলব না-
কেন?
১১ মিনিট পর বলবো,
এই ১১ মিনিট কি আপনার সাথে আমিও বৃষ্টিতে ভিঁজবো?
আপনার ইচ্ছা,
চলুন এই বেল তলায় গিয়ে দাঁড়াই খুব ভাল লাগবে
বেল তলায় কেন?
আপনার ১১ মিনিট কেন?
১১ মিনিটের একটা কারণ আছে,
আমারও বেলতলারও একটা কারণ আছে,
চলুন গিয়ে দুজন মুখোমুখি বসি
বসতেই হবে! বসলে গাছের ওই বেল খেতে ইচ্ছে করবে;
চিন্তার কারণ নেই,আমার কাছেও ওই গাছের চেয়ে আকর্ষণীয়
টকটকে দুটি বেল আছে
যুবদের প্রিয় পছন্দ
আমার পছন্দ নয় ম্যাডাম,আপনার এ রোমান্টিকাকে ঘৃনা করি,
দিল্লীকা লাড্ডু খেতে চাইবেন, আবার রোমান্টিকতা ঘৃণা করবেন এটা কি হয়!

কবি হাটতে থাকে বেলতলার দিকে,বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা
মেঘ ডাকছে গুড় গুড় বিকট শব্দে,অদূরে ঝরে পড়ে হঠাৎ করে বজ্রপাত
চিৎকার দিয়ে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরে যুবতী কবিকে,
নারীর ভেঁজা শরীরে উষ্ণতার পরশ এই বৃষ্টির ভিতর এত জ্বলন্ত আগুন!
কবি যুবতীকে জড়ানো বুক থেকে ছাড়াতে চায়,যুবতী ছাড়ে না,
এই প্রথম কোন পুরুষের বুকের মাঝে মাথা গুজানোর ভিন্ন অনুভূতি
আজন্ম প্রকৃতির এই আলিঙনতায় নেগেটিভ-পজিটিভের যে অভিন্ন সম্পর্ক
বিপরীত লিঙ্গের প্রতি জ্বলন্ত সিগারেটের চেয়েও যেখানে নেশার উন্মাদ মাদকতা
চুম্বকের সাথে লোহার যে সম্পর্ক
জোয়ারের সাথে স্রোতের যে সম্পর্ক
পুকুরের সাথে জলের যে সম্পর্ক
সুঁইয়ের সরু গর্তের সাথে সুতার যে সম্পর্ক
এরকই একটা অভিন্ন সম্পর্ক নারী-পুরুষের সাথে,
সেদিন আর কিছুই হলো না,মেঘ উড়িয়ে দেখা দিল সন্ধ্যার সপ্তমী চাঁদ
এক স্বপ্নের ভিতর আরেক স্বপ্ন উকি দিতে শুরু করেছিল দীর্ঘ দিন।

৯৩ দিন পর,এক ভোর সকালেই সেই যুবতীর সাথে কবির দেখা,
রেল লাইনে ট্রেনে উঠার সময়,কবির চোখে ঝাপসা ঝাপসা সেদিনের দৃষ্টি
এই মেযে়র সাথে কোথাও দেখা হয়েছিল বোধয় কোন এক বৃষ্টি সন্ধ্যায়,
সে সুস্মিতা নয় তো!
এই যে কবি সাহেব এখানে আপনি?
জ্বি কাকে বলছেন? বলে কবি।
আপনাকে জনাব,সৈয়দপুর রেল ষ্টেশনে-কোথাও যাবেন নাকি?
জ্বি,মাগুড়া যাব,আপনি?
কাছাকাছি-চলুন ওই যে ট্রেন ছেড়ে দিচ্ছে?
আপনি যান-
আপনি?
যাত্রা বাতিল করলাম,পরের ট্রেনে যাব?
কারণ?
১১ মিনিট
আপনার-আমার কেবিন নাম্বারটাও কিন্তু ওই ১১
কি!
বললাম-কেমন আছেন?


Print this post

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন